বিশ্ব মা দিবস আজ। ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের দিনটি মাকে সম্মান জানানোর। প্রতিবছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বব্যাপি মা দিবস পালন করা হয়।দিবসটি বিশ্বজুড়ে মাতৃত্ব ও মাতৃসত্তার গুরুত্ব এবং তাৎপর্য স্মরণ করে দেয়। যদিও সন্তানের জন্য মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানাতে ঘটা করে দিবসের প্রয়োজন হয় না তবুও মায়ের জন্য জমানো ভালোবাসা প্রকাশে সারা বিশ্বে পালিত হয় ‘বিশ্ব মা দিবস’। কিন্তু এই মা দিবস বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালিত হতে দেখা যায়। কীভাবে উদযাপিত হয় মা দিবস আর কে প্রথম দিসবটির প্রচলন করেছিলেন এই সব তথ্য উঠে এসেছে বিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে।
মধ্যযুগের সময়ে মায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর উপায়টা ভিন্ন ছিল। সে সময়ে নিয়ম ছিল যারা কাজের জন্য যেখানে বড় হয়েছেন সেখান থেকে চলে গিয়েছেন, তারা আবার তাদের বাড়িতে বা মায়ের কাছে এবং ছোটবেলার চার্চে ফেরত আসবেন। সেটা হবে খ্রিষ্টান ধর্মের উৎসব লেন্টের চতুর্থ রোববারে।
সেসময় ১০ বছর বয়স হতেই কাজের জন্য বাড়ির বাইরে চলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। তাই এটা ছিল সবাই মিলে পরিবারের সঙ্গে আবারও দেখা করার ও একসঙ্গে সময় কাটানোর একটা সুযোগ। এভাবেই ব্রিটেনে দিনটি হয়ে উঠে মায়ের রোববার। তবে যেহেতু লেন্টের তারিখ পরিবর্তিত হয়, তাই রোববারও নির্দিষ্ট থাকে না।
আধুনিক যুগে মা দিবস একশ বছরের একটু বেশি আগে থেকেই মা দিবস পালিত হচ্ছে। আমরা এখন যে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালন করছি এর সূচনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়েদের জন্য বিশেষ দিন পালনের কথা ভেবেছিলেন। তার সেই ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনে যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের অনুমোদনক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মায়েদের জন্য উৎসর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।
মা দিবস কেন্দ্র করে আক্ষেপ
বর্তমান সময়ে আমরা দেখি মা দিবস কেন্দ্র করে সন্তানরা নানান উপহার দেন তাদের মায়েদের। মায়ের জন্য সন্তানের ভালোবাসা অমূল্য। তবে ১৯৯৪ সালের পর থেকে দিনটির মূল্যায়ন ভিন্নভাবে হতে শুরু করে। এই দিবসটি বিভিন্ন কোম্পানি আর প্রতিষ্ঠানকেও আকৃষ্ট করে।
ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক ক্যাথেরিন আন্তোলিনি বলেন, আনা কখনোই এটার বাণিজ্যিকরণ চাননি। কিন্তু শুরু থেকেই এটার বাণিজ্যিকরণ হতে থাকে, ফুলের ব্যবসা, কার্ড, চকোলেট বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান নানান অফার নিয়ে হাজির হতে থাকে। একবার যখন আনা দেখলেন মা দিবস কেন্দ্র করে ফুলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন তিনি একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এটার নিন্দা জানান।