বাধা বিপত্তি পেরিয়ে যেভাবে হয়ে উঠলেন সৌদির প্রথম মিক্স মার্শাল আর্ট কন্যা
নতুন সময় ডেস্ক
|
সামাজিকভাবে রক্ষণশীল মনোভাবের জন্য পরিচিত সৌদি আরব। যেখানে খেলাধুলার সুযোগ মহিলাদের জন্য সীমিত ছিল, সেখানে একজন নারী হয়ে মিক্স মার্শাল আর্ট খেলে নিজের দেশকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা অনেকটা স্বপ্নের মতো। যেমন, নারী হয়ে বক্সিং খেলা, তাও আবার ছেলেদের সাথে! পুরো জিমে নারী মাত্র একজনই। তার নাম হাতান আলসাইফ। নিজের অনুশীলন চালিয়ে যেতে, শুরু করেন পুরুষদের সাথে প্রশিক্ষণ। প্রতিপক্ষ নিজের লিঙ্গের বিপরীত। সেই সাথে শক্তিশালী বটেও। অনুশীলনের সময়, আঘাত পেলে থামান না খেলা। মার খান, চোখ থেকে অশ্রু পড়ছে, তবুও চালিয়ে যাচ্ছেন প্রশিক্ষণ। এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি হাতানকে নিয়ে গিয়েছে সাফল্যের শিখরে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন নিউজ এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে এই মিক্স মার্শাল আর্ট কন্যার ফাইটার হয়ে ওঠার গল্প। শুক্রবার (১০ মে) মিশরের নাদা ফাহিমের বিরুদ্ধে তার অ্যাটমওয়েট লড়াইয়ের আগেই, ২২ বছর বয়সী ইতিমধ্যেই মিক্স মার্শাল আর্ট (এমএমএ)-তে নতুন ইতিহাস গড়েছেন । তবে শুরুটা এতো সহজ ছিল না। সৌদি আরবের রিয়াদে তার জিমে থাকা কয়েকজন নারীর মধ্যে একজন তিনি। ইচ্ছে শুধু আন্তর্জাতিকভাবে সৌদির হয়ে লড়াই করা। তবে মিক্স মার্শাল আর্টে তার সাফল্যের অন্যতম কারণ হিসেবে ‘আগ্রাসী’ মনোভাবকে উল্লেখ করেছেন। আলসাইফ সিএনএন স্পোর্টকে বলেন, “আমিই একমাত্র মেয়ে ছিলাম যে দিনরাত জিমে অনুশীলন করছিল। আমি সর্বদা ছেলেদের সাথে অনুশীলন করি কারণ কোন মেয়ে নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমি ছেলেদের সাথে ট্রেনিং করি। মজার ব্যাপার হলো, যখন মূল খেলায় যাই, তখন অন্য মেয়ের কাছ থেকে আঘাত খেলায় মার খেলে কিংবা আঘাত পেলে আমার মনে হয়, ‘এসব মার কোন মারই না। ‘ কিছুক্ষণের মধ্যে এক পর এক আক্রমণের মধ্যে দিয়ে শেষ করে দেই প্রতিপক্ষকে। মারগুলো ছেলেদের থেকে শিখেছি। দুই তিনটা খেলে আর উঠতে হবে না। জানুয়ারিতে, আলসাইফ প্রফেশনাল ফাইটারস লিগের (পিএফএল) সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা তাকে সৌদি আরবের প্রথম নারী হিসেবে মিক্স মার্শাল আর্টিস্ট হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেয়। তবে সৌদি মহিলা ফুটবল দল মাত্র দুই বছর আগেই প্রথম ম্যাচ খেলেছিল। অথচ ২০২০ সাল অব্দি একটি ঘরোয়া ফুটবল লিগও দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আলসাইফ সৌদি আরবে নারী এমএমএ যোদ্ধাদের জন্য একটি ট্রেলব্লেজার হিসাবে তার অবস্থান সম্পর্কে তীব্রভাবে সচেতন। সেই সাথে, এই ধরনের দায়িত্ব গুরুত্ব সহকারে পালন করার চেষ্টা করছেন। ছোটবেলায় মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে ফেলেন আলসাইফ। ছোটবেলায় বিষণ্নতার সাথে লড়াই করেছিলেন তিনি। এরপর, বিষণ্নতা কমাতে শুরু করেন মার্শাল আর্ট। আলসাইফ বলেন, ‘বাবা-মাকে হারানোর কারণে আমার শৈশব সহজ ছিল না। কিন্তু একমাত্র ঈশ্বরের পরে মার্শাল আর্ট আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। এটা আমার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। এ কারণেই আমি মার্শাল আর্টে আসক্ত। জিমে আমি আমার আত্মাকে জীবিত অনুভব করতে পারি।’ |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |