নাথান বম আসলে এখন কোথায়
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() নাথান বম আসলে এখন কোথায় আরেকটা বড় প্রশ্ন হচ্ছে, দলের সদস্যরা কোথায় লুকিয়ে আছেন? কেএনএফ সূত্র অবশ্য বলছে যে দলটির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য এখন বাংলাদেশের ভেতরই আছে। তবে এর চেয়ে বেশিসংখ্যক সদস্য ছড়িয়ে আছে মিয়ানমার ও মিজোরামের বিভিন্ন এলাকায়। মিজোরামের একাধিক সূত্র বলছে, ওই রাজ্যসংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তের একটি জায়গায় নাথান বম আছেন সন্দেহ করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে যে ব্যাংকে দুই দফা হামলার পর কেএনএফের বেশির ভাগ সদস্যই আসলে পালিয়ে গেছে। আর নাথানের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে স্পষ্ট করে তারা কেউ কিছু বলছে না। কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) ইনফরমেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের (আইআইবি) ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং বলেন, কেএনএফের প্রেসিডেন্ট নাথান বম স্যার আসলে এখন সুইজারল্যান্ডে আছেন। সেখানে বাদ দিয়ে যেখানেই খোঁজা হোক না কেন, কেউ তাঁকে পাবে না। কেএনএফ ২০২২ সালের গোড়ার দিকে পাহাড়ে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় ওই বছরের অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। কেএনএফের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলার সময়ই ওই সশস্ত্র দলের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে চলতি বছরের ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেল পাড়ায়। শান্তি আলোচনার মধ্যেই ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে ও পরদিন ৩ এপ্রিল থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে ১৭ লাখ টাকা, ২টি লাইট মেশিনগানসহ (এলএমজি) ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। পরে অবশ্য তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়। পরপর দুই উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেএনএর ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং বলেন, ‘আমাদের মোট সদস্যসংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে শুধু বম নয়, ম্রো, খিয়াং পাংকুয়া, লুসাইসহ সব জাতিসত্তার সদস্যই আছেন। লুসাইদের সংখ্যা কম। এর একটি অংশ এখনো বাংলাদেশে আছে। তবে বেশির ভাগ সদস্য দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।’ দেশের বাইরে বলতে ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের চিন রাজ্য কি না, জানতে চাইলে ফ্লেমিং বলেন, হ্যাঁ, তাঁরা বাংলাদেশের বাইরেই আছেন। নাথান বমের বর্তমান উপস্থিতি নিয়ে আসলে ধোঁয়াশা কাটছে না। পার্বত্য অঞ্চলের পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বলিপাড়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৈমুর হাসান খান বলেন, ‘নাথান কোথায় আছেন, সে ব্যাপারে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চয়ই খোঁজখবর রাখছে। তবে আমার ধারণা, যেসব সদস্য এখানে ব্যাংকগুলোয় চুরি করতে এসেছিল, তারা আসলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে অন্যদিকে চলে গেছে। তারা এখানে আর নেই।’ কেএনএফ দাবি করছে, তাদের সদস্যসংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। এই দাবি নিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৈমুর হাসান খান বলেন, ‘এগুলো শুধু বাড়িয়ে বলা। আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সন্দেহভাজন সদস্যকে আটক করেছি এবং আমাদের সম্মিলিত অভিযান চলছে।’ আমার ধারণা, নাথান বম নেদারল্যান্ডসে আছেন এবং তিনি বেশ আগেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কারণ, নাথানের এনজিওটিকে সাহায্য করত নেদারল্যান্ডসের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। মেজর অবসরপ্রাপ্ত এমদাদুল ইসলাম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কারও কারও ধারণা যে নাথান বম আসলে ইউরোপের কোনো দেশে আছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর অবসরপ্রাপ্ত এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ধারণা, নাথান বম নেদারল্যান্ডসে আছেন এবং তিনি বেশ আগেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কারণ, নাথানের এনজিওটিকে সাহায্য করত নেদারল্যান্ডসের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারাই তাঁকে ওই দেশে নিয়ে গেছে।’ কেএনফের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য গঠিত কমিটির সভায় নাথান বমের উপস্থিতির ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে একটি সূত্র জানায়। কিন্তু দুই দফা বৈঠকেও তাঁকে হাজির করা যায়নি। শেষ ২২ এপ্রিল চূড়ান্ত আলোচনা হওয়ার কথা ছিল বলে একটি সূত্র জানায়। তার আগেই ব্যাংকগুলোয় হামলার ঘটনা ঘটল। মেজর অবসরপ্রাপ্ত এমদাদুল ইসলাম বলেন, ওরা আসলে নাথানকে দুই দফায় আনতে ব্যর্থ হয়। এরপরই শান্তি আলোচনায় একধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়। এই আলোচনাকে আর টেনে না নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটানো হয়। দুই দিনের ব্যাংকের সশস্ত্র হামলার চিত্র দেখলে বোঝা যায় যে ওরা আসলে খুব বড় ধরনের ক্ষতির উদ্দেশ্য নিয়ে আসেনি। শুধু একটু ভয়ভীতি তৈরি করার জন্য এসেছিল। মূল লক্ষ্য ছিল, শান্তি আলোচনাটাকে কোনোভাবে ভেস্তে দেওয়া। ভারতের ত্রিপুরা বা কলকাতা হয়ে কিংবা মিয়ানমারের চিন থেকে ইয়াঙ্গুন হয়ে নাথান বম ইউরোপে চলে গেছেন বলে মনে করেন এমদাদুল ইসলাম। তাঁর যুক্তি হলো, সাম্প্রতিক ব্যাংক হামলার আগে কেএনএফকে নিয়ে এত আলোচনা ছিল না। নাথান বমকেও কারও খুব একটা অনুসরণ করার কথা নয়। তাই তিনি এসব পথ ধরে সহজেই ইউরোপে চলে যেতে পারেন। তবে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও আসাম রাইফেলসের দুটি সূত্র জানায়, তাদের ধারণা নাথান বম মিজোরামে আছেন। বিএসএফের এক সূত্র বলে, ‘আমাদের কর্মপরিধি সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। এর বাইরে ঢোকার অধিকার আমাদের নেই। তাই নাথান ও সশস্ত্র জঙ্গিদের কোনো গোষ্ঠী যদি সেখানে থেকেও থাকে, তাকে ধরা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’ বম জাতিগোষ্ঠীর এক প্রবীণ সদস্য সম্প্রতি বলেন, ‘আমার মতো অনেকেই জানেন যে নাথান মিজোরামের লংটলাই জেলার মুনাউন গ্রামে থাকতেন। এটা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। তবে নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারছেন না।’ এদিকে ভারতের আসাম রাইফেলসের একটি সূত্র বলে, নাথান বম মিজোরামের রাজধানী আইজলের উপকণ্ঠে ১৭ কিলোমিটার দূরের একটি জায়গায় ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি মিজোরামের সাইয়া জেলার থুলসি নামের একটা এলাকায় চলে গেছেন। এলাকাটি মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা। মিজোরামের স্থানীয় মিজো সম্প্রদায়ের আশ্রয়েই নাথান সেখানে রয়ে গেছেন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |