প্রকাশ: Tuesday, 2 April, 2024, 12:13 AM সর্বশেষ আপডেট: Tuesday, 2 April, 2024, 12:19 AM
মায়ের জন্য পুলিশের পা ধরেও রক্ষা হয়নি জাহেদুলের
অসুস্থ মায়ের প্রাণ বাঁচাতে ওষুধ কিনতে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েই ট্রাফিক পুলিশের মুখে পড়েন জাহেদুল ইসলাম নামে এক যুবক। কেঁদে-কেটে আর হাত-পায়ে পড়েও রক্ষা হয়নি তার। তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশ।
জরিমানার টাকা কিভাবে দেবেন এ নিয়ে বারবার মূর্ছা যান ওই যুবক। তবুও মন গলেনি ট্রাফিক পুলিশের।
আর এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এতে দেখা যায়- মামলা না দিতে পুলিশের পায়ে ধরে কাঁদছেন মোটরসাইকেল আরোহী।
রোববার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়ের বাড়ির কাছে মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেল আরোহীর নাম জানা গেলেও তার বাড়ি কোথায় তা জানা যায়নি।
ঘটনার সময় এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের ফটকের পাশে মোটরসাইকেল আরোহী যুবক ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যকে দুই হাত জোড় করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অনুরোধ করছেন জরিমানা ও মামলা না দিতে। এ সময় পুলিশ সদস্য পাশে থাকা ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ আমজাদ হোসেনকে দেখিয়ে দেন।
এরপর ভুক্তভোগী হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলতে থাকেন- স্যার আমার ভুল হয়েছে, আমার মা অসুস্থ, তড়িঘড়ি করে ওষুধ কেনার জন্য এসেছি, আমার মা মরে যাবে, এবারের মতো মাফ করে দেন। একপর্যায়ে যুবক ওই পুলিশ কর্মকর্তার দুই পা ধরে ক্ষমা চান।
পথচারীরাও ওই যুবকের কান্নায় ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাকে। তবুও রক্ষা হয়নি জাহেদুলের। মোটরসাইকেল আরোহীর কান্নার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এরই মধ্যে সুষ্ঠু বিচার ও আইন প্রয়োগে মানবিক হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন নেটিজেনরা। আর যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো গাড়ি চালকের ওপর এমন অমানবিক আচরণ করতে না পারেন সেদিকে খেয়াল রাখার আহবান জানান পুলিশ সুপারকে (এসপি)।
ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ ভিডিও আপলোড দিয়ে ক্যাপশন লিখেন- ‘এই হয়রানির শেষ কোথায়? অসুস্থ মায়ের ওষুধ নিতে যাওয়ার পথে, কথিত চেকপোস্ট বসিয়ে অমানবিকতা! ভুক্তভোগী কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজ মাকে বাঁচানোর আকুতি। ঘটনাস্থল কালিবাড়ি মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের সামনে সময়, দুপুর ১টা। তুষার নামে একজন এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।’
সাব্বির নামে আরেক নেটিজেন লিখেছেন- ‘ঠাকুরগাঁওয়ের মতো কোনো জেলায় এভাবে ট্রাফিকের সম্মুখীন হয় না, কিন্তু আফসোস কেউ কথা বলার নেই।’
গত বুধবার ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত ৮ মাসে এ জেলায় সড়ক পরিবহণ আইনে ৫ হাজার ১৫২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় থেকে জরিমানা আদায় হয় ১ কোটি ৯২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ টাকা।
মোটরসাইকেলআরোহী জাহেদুল ইসলামের আর্তনাদ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) আমজাদ হোসেন বলেন, ‘জরিমানাপ্রাপ্ত জাহেদুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তির মোটরসাইকেল নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয় মানুষ, এ ঘটনায় আমাদের ত্রুটি থাকলে আমরা এখান থেকে শিক্ষা নেব।’