কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া নাকি এখানে কাজ হয় না; স্থানীয় ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এখানকার সাধারণ মানুষদের জমি সংক্রান্ত যেকোনো কাজে সরকারি ফি ছাড়াও গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। দীর্ঘদিন ধরেই এখানকার সাধারণ মানুষ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীর নিকট জব্দ।
সম্প্রতি এসব অপকর্মের পর্দা উন্মোচিত হয়েছে। একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে অফিস কক্ষে বসেই একজন সেবা গ্রহীতার নিকট থেকে জমি খারিজ করিয়ে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুনে নিচ্ছেন ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী আব্দুল কাদির।
তার এসব দুর্নীতি জনসম্মুখে আসায়, সকলেই এখন তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারি নির্দিষ্ট ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা (ঘুষ) না দিলে কোনো কাজই করেন না ভূমি কর্মকর্তা মীর আবুল হাতিম ও অফিস সহকারী আব্দুল কাদির। দীর্ঘদিন ধরেই তারা এখানে ঘুষের রাজত্ব খুলে বসেছেন। অনেকে প্রতিবাদ করতে গিয়েও ভয়ে কিছুই বলতে পারেননি।
জমি খারিজ করতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান ভোলা মিয়া। তিনি বলেন, অনেকদিন ধরেই আমার জমিটি খারিজ করাতে ভূমি অফিসে আসা যাওয়া করছি। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা না দিলে কোনোভাবেই তারা কাজ করবেন না বলে আমাকে জানিয়ে দেন। পরে আমি অফিস সহকারী আব্দুল কাদিরকে ৫ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দেই। কিন্তু তিনি আমার কাছে আরও এক হাজার টাকা দাবি করেন।
টাকা দিয়েও দিনের পর দিন হয়রানির শিকার আরেক ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে জায়গা খারিজ করতে তিন হাজার টাকা লাগে; সেখানে দশ থেকে পনের হাজার টাকা দিতে হয়। শুধু তাই নয় টাকা নিয়েও হয়রানি করে। মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। এই অফিসের ভূমি কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী দু’জনে মিলে এখানকার মানুষদের অর্থ লুটপাট করছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে পল্লী বিদ্যুতের চাকরি ছেড়ে ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক পদে যোগদান করেন আব্দুল কাদির। এরপর টাকার জন্য আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। গ্রামে সুসজ্জিত একটি বাড়ি ছাড়াও রাজধানীতে রয়েছে তার আরও একটি বাড়ি। এ যেন রীতিমত আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
ভিডিও ও তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি এসব ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাঠানো হয়েছে। আমি এখন আর কিছু বলতে রাজি না।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মীর আবুল হাতিম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। তাছাড়া অফিস সহকারী আব্দুল কাদিরের বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না। তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সঠিক বলতে পারবেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলাম বলেন, মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী আব্দুল কাদিরের একটি ভিডিও আমি দেখেছি। তার এই ঘুষ নেওয়ার ভিডিও প্রকাশের পর তার কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমি বিষয়টি জানিয়েছি। তার ব্যাখ্যা পাওয়ার পর পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।