চন্দনাইশে বিস্ফোরনে নিহত চালককে বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ ৪ সাহসীর পাশে কেউ নেই
জাবের বিন রহমান আরজু চন্দনাইশ
|
চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ২৫ মার্চ সিএনজি অটোরিকশা বিস্ফোরনে আগুনে অঙ্গার হয়ে নিহত চালক আব্দুল সবুরের মর্মান্তিক মৃত্যুর দৃশ্য গোটা দেশকে কাঁদিয়েছে। হৃদয়বিদারক এই ঘটনার পিছনে রয়েছে আরেকটি সাহসী গল্প। ঘটনার দিন যখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা আর শত শত পথচারী যে যার মতো ব্যস্ত ছিলো ঠিক তখনই পুড়ে কয়লা হওয়া চালক আব্দুল সবুরসহ সিএনজিতে থাকা শিশু-নারী যাত্রীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসন ৪জন সাহসী পথচারী! এগিয়ে আসা অকুতোভয়ী চারজন পথচারী আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া চালক আব্দুল সবুরকে উদ্ধার করতে না পারলেও নিজেদের জীবন বাজি রেখে উদ্ধার করেছেন এক শিশু-নারীসহ তিনজনকে। উদ্ধার করতে গিয়ে উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড, মোজাহের পাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল আজিজ (৩৬), একই এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে আব্দুল জব্বার (৬৫), ট্রাকের হেল্পার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ফরহাদ হোসেন বাবু (১৭) ও সাতকানিয়া উপজেলার পুড়ানগড় ইউনিয়নের শামসুল আলমের ছেলে মোঃ হাসান (২৮)'র শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়। চারজনের মধ্যে তিনজন এখন চট্টগ্রাম বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের বিছানায় কাতরাচ্ছেন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। অন্যজন স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কি ঘটেছিলো ঐদিন এ বিষয়ে জানতে চাইলে ষাটোর্ধ্ব আব্দুল জব্বার বলেন, ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামাচ্ছিল। তা দেখে চলন্ত একটি সিএনজির ড্রাইভার জরিমানার ভয়ে তার গাড়িটি হঠাৎ ঘোরাতে গিয়ে পিছন থেকে বালু বোঝাই একটি ট্রাক সিএনজিকে ধাক্কা দিলে সিএনজিটি উল্টে যায়। পরে আমরা কয়েকজন দৌড়ে এসে গাড়ির ভেতরে থাকা ১ শিশু-নারীসহ তিনজনকে উদ্ধার করতে পারলেও ড্রাইভারের বাম পা গাড়ির নিচে আটকে পড়ায় কোনোভাবেই তাকে উদ্ধার করতে পারছিলাম না। তখন সবাই মিলে উলটে যাওয়া গাড়িটি কে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলে ঠিক তখনই কিছু বুঝে উঠার আগেই বিকট শব্দে চারিদিকে আগুন ধরে যায়। ড্রাইভারকে অনেক টানাটানি করে বের করতে না পেরে শেষমেশ নিজেদের বাঁচাতে দৌঁড়ে চলে আসি। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, আশেপাশে কত মানুষ মোবাইলে ভিডিও তোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। এমন কি ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। কেউ এগিয়ে আসেনি। এমন কি আমরা দগ্ধ হয়েছি আমাদেরকেও বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, আগুনে পুড়ে আব্দুল আজিজ ও আব্দুল জব্বারের শরীরের ১৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১৭ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে ফরহাদ হোসেন বাবুর। তাদের মধ্যে বর্তমানে আব্দুল আজিজের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এদিকে সবাই নিহত চালকের পরিবারের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ালেও এখনো পর্যন্ত আহতদের কোনো প্রকার খবর বা আর্থিক সহযোগিতা পাননি বলে জানান স্বজনরা।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |