মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর আর মাত্র ক’দিন পরেই। ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজধানীসহ সারাদেশের শপিংমলগুলোয় সব বয়সের ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ছোট-বড় ধনী-গরিব সবশ্রেণির মানুষ ঈদের দিন নতুন জামাকাপড় পড়তে কেনাকাটা করছেন। বিপণিবিতানগুলোতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ভিড় আর ঝামেলা এড়াতে অনেকেই রমজান শুরুর পর থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। গ্রাহকদের মধ্যে দেশে তৈরি কাপড় ক্রয়ে আগ্রহ বেশি। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো দেশীয় ব্যান্ডিং কাপড়, শাড়ি, কামিজ, পায়জামা-পাঞ্জাবী ক্রয় করছেন। এমনকি নিম্ন আয় ও সীমিত আয়ের মানুষজন ফুটপাতে কেনাকাটায়ও দেশি কাপড়ের প্রতি বেশি ঝোক দেখা যাচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনাসহ বিভাগীয় শহর ও জেলাশহরগুলোর ঈদ বাজারে ভারতীয় শাড়ি ও সব ধরনের জামা কাপড় বিক্রিতে ধ্বস নেমেছে। দেশি পণ্য বিক্রি হচ্ছে বেশি। দেশে আন্তর্জাতিক মানের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আড়ং, ইয়েলো, রিচম্যান, অঞ্জন’স, বিবিয়ানা, ক্যাটস আই, সেইলর, এক্সটেসি, কে ক্রাফট, এম ক্রাফট, টুয়েলভ ক্লোথিং, ভাসাবি, দর্জিবাড়ি, রং বাংলাদেশ, ইসিসহ দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি। বিদেশি তথা ভারত, চীন, থাইল্যান্ডের তৈরি পোশাক এবার বাংলাদেশের ঈদ বাজারে সুবিধা করতে পারছে না। বিশেষ করে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ আন্দোলনের প্রভাবে ভারতীয় পোশাক বিক্রি একেবারে তলানিতে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে তথা গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, পান্থপথ, গুলিস্তানসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার শপিংমলে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এতোদিন বেচা-বিক্রি খুব একটা না হলেও গতকাল থেকেই বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা। ঈদের প্রায় ১১ দিন বাকি থাকায় এখনো অনেক ক্রেতা কেনাকাটা শুরু করেননি বলেও মনে করছেন তারা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ পোশাকের দাম অত্যধিক। তাই হিসাব করে কিনতে হচ্ছে। এদিকে যে কোনো উৎসবে কেনাকাটায় বাড়তি আগ্রহ থাকে তরুণদের। এবারও ব্যতিক্রম নয়। বিপণিবিতানগুলোতে কেনাকাটা করতে আসাদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। সমাগম বেশি দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের আউটলেটগুলোয়। ঈদ সামনে রেখে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো। ফেসবুকসহ সর্বত্রই এখন ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে সারা দিয়ে অধিকাংশ ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় দেশীয় ব্র্যান্ড। উৎসবের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতায় জমে উঠছে এইসব ফ্যাশন হাউজগুলো।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই এখন ফ্যাশনেবল। কাপড়ে ক্ষেত্রে সবাই চায় উন্নতমানের, স্টাইলিশ ও কম্ফোর্টেবল। বাংলাদেশের সমস্ত ফ্যাশন হাউজ ডিজাইনার ক্রমাগতভাবে কাস্টমারকে নতুন নতুন ডিজাইন দিয়ে যাচ্ছেন। দেশে বিভিন্ন ধরনের পোশাকের ব্র্যান্ডের উদ্ভব হওয়ায়, কোনটি সেরা তা নির্ধারণ করা কঠিন। ঐতিহ্যবাহী পোশাকের ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানের পোশাকের ব্র্যান্ড বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে ক্রেতাদের সামনে। আড়ং, ইয়েলো, রিচম্যান, অঞ্জন’স, বিবিয়ানা, ক্যাটস আই, সেইলর, এক্সটেসি, কে ক্রাফট, এম ক্রাফট, টুয়েলভ ক্লোথিং, ভাসাবি, দর্জিবাড়ি, রং বাংলাদেশ, ইসিসহ নতুন নতুন দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো মানসম্মত পোশাকের সম্ভার সাজিয়েছে। এছাড়া দেশের স্বনামধন্য প্রায় সব ব্র্যান্ডের এখন অনলাইন শপ রয়েছে। গত কয়েক বছরে দেশে কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইনে কেনাকাটার প্রচলন বেড়েছে, বিশেষ করে মহামারির পর থেকে। তাই ঘরে বসেই ব্র্যান্ডের মানসম্মত পোশাক মেলায় ক্রেতাদের ভোগান্তিও কমেছে।
সারা লাইফ স্টাইলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রোকোনুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ধীরে ধীরে দেশীয় পোশাক ব্যান্ডগুলোর ভালো করছে। বিভিন্ন ধাপের ক্রেতাদের জন্য দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড পণ্য বাজারে আনছে। তিনি বলেন, যার আড়ং-এর পণ্য ক্রয়ের সক্ষমতা নেই, সে হয়তো সারা লাইফ স্টাইলে ভিড় করছে। এভাবে উচ্চ-মধ্যম মানের ক্রেতাদের জন্য পৃথক পৃথক ব্র্যান্ড বাজারে রয়েছে। মো. রোকনুজ্জামান বলেন, দেশের বাজারে দীর্ঘদিন থেকেই ভারতীয় পোশাকের দখল ছিল। যা এখন ধীরে ধীরে কমছে কারন দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর পণ্যের মান এখন অনেক ভালো। দেশীয় পোশাকের দোকানে ভিড় করছে। আর ভারতের পণ্য বর্জনেরও প্রভাব রয়েছে। গতকাল মালিবাগের অঞ্জন’স শোরুমে আলাপকালে ক্রেতা আল আমিন হোসেন বলেন, আমি বেশকয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরেছি। মনের মতো পাঞ্জাবি পাইনি। তাই অঞ্জন’সে এসেছি। আশাকরি এখানে পছন্দের পাঞ্জাবি পাব। আল আমিন এ সময় দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের মানের প্রশংসা করেন এবং ভারতীয় পোশাক বর্জণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের দেশীয় পণ্য বিভিন্ন দেশের বাজার দখল করে আছে। অথচ আমরা এখনো ভারতের পণ্যের দিকে তাকিয়ে থাকি কেন? আমরা এখন থেকে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করবো এই শপথ নেয়া উচিত। আমাদের পোশাকের মানও বিশ্বমানের।
সরেজমিনে বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নিত্যনতুন পোশাকের সম্ভার মেলে ধরেছে দেশের ফ্যাশন হাউজগুলো। উৎসবের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতায় জমে উঠছে এইসব ফ্যাশন হাউজ। ঈদ উৎসবে ক্রেতা সমাগম বাড়ছে দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের আউটলেটগুলোয়। আর ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত ফ্যাশন হাউজগুলো।
এবার আরও আকর্ষণীয় ডিজাইনের নতুন নতুন কালেকশন এনেছে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড সেইলর। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার বেচা-কেনাও জমজমাট। মিলন খান নামের একজন ক্রেতা বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদের মৌসুমে বাড়তি কালেকশন থাকে, তাই ক্রেতাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে আগ্রহও বেশি। তবে এবার ঈদের সঙ্গে পহেলা বৈশাখের কালেকশন ঈদ কেনাকাটার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে, উৎসবে যে ধরনের রঙ-বর্ণের চাহিদা থাকে, ক্রেতাদের ভিড় দেখে মনে হচ্ছে সেগুলোর কালেকশন যথেষ্ট রয়েছে।
এবারের ঈদ কালেকশনে বৈচিত্র্যময় রঙের পাশাপাশি নিখুঁত হাতের কাজ, লাক্সারিয়াস লুক, একইসঙ্গে আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে সেইলর এনেছে কাপড়ে ভিন্নতা। চাহিদা অনুযায়ী ফিচারেও রয়েছে ভিন্নতা বলে উল্লেখ করেন সেইলরের চীফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এবার ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, এবার সেইলরের কালেকশনে রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, কাবলি ও নারীদের সালোয়ার, টু-পিস ও কুর্তিসহ বিভিন্ন পোশাক। শিশু পোশাকসহ রয়েছে পরিবার ও দম্পতিদের জন্য বিশেষ কালেকশন।
দেশীয় ব্র্যান্ড অঞ্জন’স প্রধান নির্বাহী শাহীন আহমেদ বলেন, অন্যান্য বছরের মতোই কেনাকাটা ভালো। তবে নতুন নতুন ডিজাইন ও সময়োপযোগী ট্রেন্ডে দেশীয় ব্র্যান্ডে ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। একই সঙ্গে পণ্যের মান নিয়ে প্রতিযোগীতা ও ব্র্যান্ডের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া ব্র্যান্ডগুলো এখন শুধু ঢাকা কেন্দ্রীকই নয়; দেশব্যাপি বড় শহরগুলোতে চলে গেছে। ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। শাহীন আহমেদ বলেন, ব্র্যান্ডগুলো নতুন নতুন ডিজাইন নিয়ে গবেষণা করে মানসম্মত পোশাক বাজারে আনছে। পাশাপাশি বিক্রির পরের সার্ভিসটাও ভালো দিচ্ছে তাই মানুষ এখন দেশীয় ব্র্যান্ডে ঝুঁকছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ভারতীয় পণ্যের দখলে ছিল পোশাকের বাজার। সে থেকে অনেকটা আমরা বের হয়ে আসতে পেরেছি। এক্ষেত্রে বর্তমান ভারতীয় পণ্য বর্জণ ইস্যু কিছুটা হতে পারে তবে মানসম্মত দেশীয় পণ্যই মূল কারণ বলে উল্লেখ করেন শাহীন আহমেদ। কে ক্রাফটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) নাসির আহমেদ বলেন, এ বছর দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা আগের চেয়ে অনেক ভালো। তবে রোজার প্রথম দিকে বিক্রি তেমন ছিল না। এখন দিনে দিনে বাড়ছে। বিক্রি বা চাহিদা আগের চেয়ে বাড়ার সুনির্দিষ্ট কারণ নিয়ে এখনো স্টাডি করা হয়নি।
চট্টগ্রামে ভারতীয় পণ্য কোণঠাসা চট্টগ্রামে জমে উঠছে ঈদ বাজার। সর্ব সাধারণের বর্জনের মুখে বাজারে এবার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ভারতীয় পোশাক। দেশি পোশাকেই আস্থা রাখছেন ক্রেতারা। ঈদ বাজারেও নামকরা দেশি ব্রান্ডের হরেক পোশাকের ব্যাপক মজুদ রয়েছে। শাড়ী, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শিশু পোশাকসহ দেশি কাপড়ে তৈরি পণ্যের চাহিদা এবার বেশি। জুতো, প্রসাধনীতেও দেশি পণ্যের চাহিদা শীর্ষে। দামও কিছুটা নাগালে থাকায় বিক্রি হচ্ছে বেশি। তাতে বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় পোশাক যারা বাজারে তুলেছেন তারা পড়েছেন বিপাকে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর কয়েকটি মার্কেট, শপিংমল ও বিপণি কেন্দ্র ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আজ ১৯ রমজান, ঈদের বাকি আর বেশি নেই। আর তাই জমে উঠছে বন্দরনগরীর ঈদ বাজার। গতকাল সরকারি ছুটির দিনে নগরীর প্রতিটি মার্কেটে ছিল উপচে পড়া ভিড়। জুমার পরে মার্কেট, বিপণি কেন্দ্র ও শপিংমলগুলোতে ব্যাপক ক্রেতা সমাগম হয়। ক্রেতা আকর্ষণে মার্কেটগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। সন্ধ্যা হতেই আলো ঝলমল মার্কেটে অন্যরকম উৎসবের আবহ ছড়িয়ে পড়ছে। ক্রেতাদের ধরে রাখতে মার্কেট কর্তৃপক্ষ র্যাফেল ড্রসহ নানা আয়োজন রেখেছে।
নগরীর অভিজাত শপিংমলের পাশাপাশি মার্কেটগুলোতেও জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ফুটপাতের দোকানেও ক্রেতার ভিড় বাড়ছে। নগরীর আখতারুজ্জামান সেন্টার, ব্যাংক-সিঙ্গাপুর মার্কেট, লাকি প্লাজা, সাইথল্যান্ড সেন্টার, আমিন সেন্টার, স্যানমার ওসান সিটি, সেন্ট্রাল প্লাজা, মিমি সুপুর মার্কেট, কল্লোল সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, চকবাজার কেয়ারি, গুলজার মার্কেট, বালি আর্কেট, পতেঙ্গা মহাজন টাওয়ার, আলী শাহ প্লাজা, নিউ মার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজারসহ প্রতিটি মার্কেটে এখন ক্রেতার পদভারে মুখরিত। ঈদের আগে কেনা-বেচা আরও জমজমাট হয়ে উঠবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় হাল ফ্যাশনের সব পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রতিটি দোকান। ব্যবসায়ী ও দোকানীরা জানান, ধীরে ধীরে কেনা-বেচা জমে উঠছে। এতো দিন যারা ঘুরে ফিরে দেখছেন তারা এখন কেনাকাটা করছেন। মার্কেটে ক্রেতার আগমনও বাড়ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে। বাজারে এবার দেশি পণ্যের চাহিদা বেশি।
বিগত ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনে আওয়াজ উঠে। জানা গেছে, এদেশে গণতন্ত্রের বদলে কর্তৃত্ববাদি শাসন ব্যবস্থা পোক্ত করতে প্রতিবেশী দেশটির শাসক গোষ্ঠির ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করেন বেশির ভাগ মানুষ। মূলত এই ক্ষোভ থেকেই ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে।
নগরীর আগ্রাবাদের অভিজাত শপিংমল আখতারুজ্জামান সেন্টারের দ্বিতীয় তলার ‘রয়েল টাচ’ মেয়েদের পোশাকে ঠাসা। সেখানকার ব্যবসায়ী জয় রাজ বলেন, এবার ভারতীয় পোশাকের চেয়ে দেশি পোশাকের চাহিদা বেশি। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়ার বিষয়টি মিডিয়ায় আসায় অনেকে ভারতীয় পণ্যসহ বিদেশি পণ্য এড়িয়ে চলছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় পোশাকের ডিজাইনে দেশি অনেক ব্রান্ড মেয়েদের পোশাক তৈরি করেছে। এসব পোশাক দেখতে যেমন ফ্যাশনেবল তেমনি দামেও কিছুটা সস্তা। আর তাই বিক্রিও হচ্ছে বেশি। নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতির বিষয়টি মাথায় রেখে এসব পোশাকের দামও এবার কিছুটা কম রাখা হয়েছে।
সান্ত্বনা শাড়িজের মালিক হারুন অর রশিদ বলেন, ভারতীয় শাড়ির চেয়ে দেশি শাড়ির চাহিদা এবং বিক্রি দুটোই এবার বেশি। দেশে অনেক নামি-দামী ব্রান্ড হাল ফ্যাশনের শাড়ির ডিজাইন করেছে। তাছাড়া দেশি কাতান, রাজশাহীর সিলক, টাঙ্গাইলের শাড়ি তো আছেই। নগরীর টেরি বাজারের মেগা-মাটের ব্যবসায়ী নূর আহমদ মিয়া বলেন, এবার মার্কেটে দেশে তৈরি শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি, থ্রি-পিস ও শিশু পোশাকের চাহিদা অন্যবারের চেয়ে বেশি। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক আসায় অনেকে এবার মার্কেটে ভারতীয় পণ্য তোলা থেকে বিরত ছিলেন। আর যারা তুলেছেন তারা বিপাকে পড়েছেন। জানা গেছে ক্রেতাদের বিরাট অংশ বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করে দেশি পণ্য কিনছে ব্যাপক হারে। এতে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে দেশি ব্রান্ডগুলো। তারাও এই সুযোগে ক্রেতা টানতে মূল্যহ্রাসহ নানা অফার দিচ্ছে।
সিলেটে ভারতীয় পণ্যে ধ্বস প্রবাসী অধ্যূষিত সিলেটে ঈদ আসলেই জমজমাট হয়ে উঠে পোশাকের বাজার। এবারও সিলেটে মার্কেটগুলো জমে উছেছে। অন্যান্য বছর দেশীয় পোশাকের সাথে সাথে ভারতীয় কাপড়ের বিরাট কালেকশন ঘটে সিলেটজুড়ে। বৈধ-অবৈধ পথে সীমান্ত দিয়ে কাপড়ের কালেকশন করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার কালেকশন করলে সেই পণ্যের বিক্রি নিয়ে শংকিত ব্যবসায়ীরা। ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে প্রচারণা চলছে তার প্রভাব সারা দেশের মতো সিলেটেও পড়ছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ক্যাম্পেইন চলছে তাতে বিএনপির সরাসরি কোন দলীয় অবস্থান না থাকলেও দলটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এতে সমর্থন জানিয়েছেন। এতে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা ভারতের পণ্য বর্জনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সেই সাথে সাধারণ মানুষের মধ্যেই সেই তাড়না ভর করেছে। সিলেটের লোকজনের মধ্যে এমনিতেই ভারত বিরোধী একটি মানসিকতা দীর্ঘদিনের। সীমান্ত এলাকায় ভারতীয়দের বেপরোয়া তৎপরতায় অতিষ্ট থাকেন বাংলাদেশিরা। খাসিয়াদের গুলিতে নিরীহ বাংলাদেশিদের প্রাণ হারানো ঘটনাও কম নয়। সবকিছু মিলিয়ে পণ্য বর্জনের ক্যাম্পেইন জোরালো হলে সিলেট জুড়ে ভারতীয় পণ্যের বাজারে ধ্বস নামবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। কেননা সিলেটে সরকার বিরোধী রাজনীতিক নেতাকর্মীদের সংখ্যাই বেশি। রাষ্ট্রীয় দমন নিপীড়নের পরও প্রভাব ও দাপট ঈর্ষণীয়। এছাড়া ধর্মপ্রাণ মানুষের আবাসস্থল সিলেট। সেই লোকজনের মধ্যে কমতি নেই দেশপ্রেমের। এসব কিছু মিলিয়ে ঈদ বাজারে আগ্রহ হারাচ্ছে ভারতীয় পণ্য। ক্রেতাদের কাছে প্রথম পছন্দ দেশীয় পোশাক। দেশীয় জামদানী, কাতান, টাঙ্গাইলের শাড়ীর প্রতি বাড়তি আকর্ষণ ও চাহিদী নারী ক্রেতাদের। অপরদিকে, অন্যবার রেডিমেট ড্রেসের দাপট ভারতীয় পোশাকের থাকলেও তেমন একটা নেই এবার। কারন ক্রেতাদের দেশীয় পোশাকে প্রতি মনযোগ। চলমান পণ্য বর্জনে ঈদ বাজারের ভারতীয় পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ থাকায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন হচ্ছে দেশীয় পোশাক শিল্পের। সিলেটের মার্কেটগুলোতে ভারতীয় পোশাকের কালেকশন থাকলেও ক্রেতাদের মনযোগ নেই বলে জানালেন এক ব্যবসায়ী। নগরীর ব্লু ওয়াটার মার্কেটের ব্যবসায়ী শামীম আহমদ বলেন, এখনো দেশীয় পোশাক নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। আগামী দিন কি হয় তা বলা যাচ্ছে না। সিলেটের প্রাচীন মার্কেট হাসান মার্কেট। হাসান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিয়াজ মো: আজিজুল করিম বলেন, আমাদের মার্কেটে দেশী পণ্যে বিক্রি হয়। তবে ক্রেতাদের আলাপচারিতায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভারতীয় পণ্য নিয়ে উদাসীনতা। বাজার এখনো জমে উঠেনি। নিত্য পণ্য দ্রব্যের বাজার চড়া থাকায় হয়তো পোশাক বাজার কাক্সিক্ষত বেচা কেনা জমাতে পারবে না সিলেটের ব্যবসায়ীরা। সিলেট দোকান মালিক সমিতির সেক্রেটারি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকের কারণ কিনা বলতে পারবো না, তবে দেশী পোশাকের প্রতি ঝুঁকছে ক্রেতারা।