কুড়িগ্রামে ভূমি জটিলতায় ভেস্তে যেতে বসেছে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রকল্প
আহম্মেদুল কবির,কুড়িগ্রাম
|
কুড়িগ্রামে ভূমি বন্দোবস্তের জটিলতায় ভেস্তে যেতে বসেছে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রকল্প। জানা যায়, ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা কুড়িগ্রামে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল কাম পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব অনুমোদন করেন। দীর্ঘ ৮ বছর অতিবাহিত হলেও শুধুমাত্র ভূমি বন্দোবস্তের ‘ জটিলতায়’ ভেস্তে যেতে বসেছে প্রকল্পটি প্রসাশনিক কার্যক্রম। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর প্রকল্পটি শুরু করতে না পারলে এটি প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটির জন্য ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। সে বছরই জমির চাহিদা জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় ভূমি বন্দোবস্তের বিষয়টি ঝুলে যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় ২০১৭ সালে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ও জেলা শিশু পরিবার ভবনের পূর্ব দিকে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। ২০১৭ সালে প্রথম পর্যায়ে ৯ দশমিক ৩২৭২ একর জমি নির্ধারণ করে পত্র দেয় জেলা প্রশাসন। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে জেলা প্রশাসন। জমির পরিমাণ কমিয়ে প্রায় ৫ একর জমি নির্ধারণ করে ২০১৮ ও ২০২০ সালে আবারও ভূমি মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয় জেলা প্রশাসন। জমির দামও নির্ধারণ করা হয় আকাশচুম্বি। নির্ধারিত জমির বিষয়ে মতামত চেয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে পত্র দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি নিয়ে প্রতিবন্ধকতার চিঠি চালাচালিতে সেই থেকে আটকে আছে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার বিশেষায়িত হাসপাতালের বিষয়টি আবারও উত্থাপন করলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর আবারও পত্র দেন। ওই পত্রে তিনি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৬৪৪ একর অখন্ড অকৃষি জমি বন্দোবস্ত প্রদানের সম্মতি জানিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। ১৩ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ওই পত্রের বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিউত্তর পাঠায়নি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। বিষয়টি আবারও ঝুলে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন থেকে প্রস্তাবিত জমির প্রতীকী মূল্য না ধরে বাজার মূল্যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ বলছে, চলতি বছর চালু করা না গেলে প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রামের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী একটি অনন্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে প্রকল্পটি আর নাও হতে পারে। কুড়িগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হান বলেন, ‘ আমরা এখনও জমি বুঝে পাইনি। ফলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রমে যেতে পারছি না। এবছর শুরু করা না গেলে প্রকল্পটি হয়তো আর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।’ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘ বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ৫ দশমিক ৩৬৪৪ একর জমি বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন।’ কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার বলেন, ‘ প্রস্তাবিত জমির মূল্য নিয়ে জটিলতা রয়েছে। বাজার মূল্য না ধরে জমির প্রতীকী মূল্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলবো। আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে ৭৭ হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল কাম পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি হলে জেলার অসহায় এই জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের সুযোগ পাবেন। এরি মধ্যে সর্বশেষে কুড়িগ্রাম জেলাবাসির জন্য সুখবর দিলেন স্বয়ং প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে কুড়িগ্রামের রাস্তা,ঘাট, ব্রীজসহ অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত যে কোন বড় প্রকল্পে কুড়িগ্রাম জেলাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যুক্ত করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এতে কুড়িগ্রামের প্রতিবন্ধিদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |