গর্ভবতী মা কি রোজা রাখতে পারবেন?
নতুন সময় ডেস্ক
|
রমজান মাসে গর্ভবতী নারীর রোজা রাখা না রাখা নিয়ে সবার মনে ভীষণ রকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। তাই প্রশ্ন হচ্ছে - গর্ভবতী মা কি রোজা রাখতে পারবেন? পরিণত বয়সে গর্ভধারণ নারী জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা কোন অসুখ নয়। সুতরাং একজন সুস্থ নারী গর্ভকালীন সময়ে রোজা রাখতে পারবেন। গর্ভকালীন সময়ে রোজা রাখতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সেজন্য সন্তানসম্ভবা নারীর শারীরিক সুস্থতা ও পর্যাপ্ত সুষম খাদ্যগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। গর্ভকালীন সময়কে আমরা মূলত তিন পর্বে ভাগ করি। প্রথম তিন মাস, দ্বিতীয় তিন মাস এবং শেষ তিন মাস। প্রথম তিন মাসে সাধারণত বমিবমি ভাব, বমি হওয়া, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি উপসর্গগুলো দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বমিজাতীয় লক্ষণগুলো সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে শুরু হয়। বমি হওয়ার কারণে রোজা রাখায় সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত বমি হলে শরীরে পানি, লবণের মতো প্রয়োজনীয় উপাদানের কমতি দেখা দেয়। ফলে নানাবিধ জটিলতা, যেমন: পানিশূন্যতা, ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, অত্যধিক দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। গর্ভধারণের দ্বিতীয় তিন মাসে এই সমস্যাগুলো সাধারণত থাকে না। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে গর্ভজনিত অন্য জটিলতা দেখা যেতে পারে। যেমন: ৫ মাস পর উচ্চ রক্তচাপ, ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে গর্ভজনিত ডায়াবেটিস ইত্যাদি। তখন নিয়মিত ওষুধ বা ইনজেকশন নেওয়া লাগতে পারে। শেষের তিন মাসে গর্ভস্থ শিশুর ওজন বৃদ্ধি পায়। আর এর সঙ্গে মায়ের পুষ্টির সম্পর্ক জড়িত থাকে। এ জন্য গর্ভবতী নারীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। গর্ভকালীন সময়ে রোজা রাখতে হলে এ বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। গর্ভবতী নারীর রোজা রাখার পূর্ব প্রস্তুতি শারীরিক প্রস্তুতি রোজার আগে গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। কোন ধরনের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। পাশাপাশি ওষুধের ধরণ, মাত্রা, সময় ইত্যাদি নির্ধারণ করতে হবে। মানসিক প্রস্তুতি নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। খাবার, বিশ্রাম ইত্যাদির ক্ষেত্রে রোজার সময় কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন করা লাগতে পারে। রোজায় করণীয় খাদ্যাভ্যাস ১. আঁশযুক্ত, উচ্চ ক্যালরি এবং পানি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ইফতারে খেজুর, কলা রাখুন, এগুলো শক্তিদায়ক খাবার। এই ফলদুটো আঁশ সমৃদ্ধ, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। এ ছাড়া এ দুটোতে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান ও ভিটামিন রয়েছে। ২. ইফতারিতে দই - চিড়া খান, যা সহজে হজম হবে। পানি সমৃদ্ধ মৌসুমি ফল যেমন শসা,তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি রাখুন। এগুলো পুষ্টির পাশাপাশি পানির অভাব পূরণ করতে সাহায্য করবে। ৩. পানি ও অন্যান্য তরল খাবার যেমন হালকা লেবু মিশ্রিত শরবত অথবা ইসবগুল দিয়ে তৈরি শরবত খান। এ ছাড়া ডাবের পানি, ঘরে তৈরি সতেজ ফলের রস ইত্যাদি খেতে পারেন। ৪. ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার সমপরিমাণ তরল পানীয় খাওয়া উচিত। এর ফলে পানিশূন্যতা, প্রস্রাবের সংক্রমণ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি জটিলতা তৈরি হবে না। ৫. ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। তাহলে বুক জ্বালা অথবা গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে। রাতের খাবারে ভাত বা রুটির সঙ্গে মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজি ও বিভিন্ন রকমের ডাল রাখুন। প্রতি রাতে এক গ্লাস দুধ বা দধি খাওয়ার অভ্যাস করুন। ৬. সাহরির সময় সম্ভব হলে আঁশযুক্ত খাবার, যেমন: লাল চাল বা লাল আটার রুটি, মাছ, সবজি ইত্যাদি খাবার খান। একটা বা দুটো খেজুর সাহরির খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। ৭. গর্ভাবস্থায় একসঙ্গে অনেকগুলো খাবার খেলে অস্বস্তিবোধ হয়। সেজন্য ইফতার থেকে রাতের খাবার পর্যন্ত এবং সাহরির সময় অল্প অল্প করে বার বার করে খাবেন। অবশ্যই সহজপাচ্য ও সুষম খাবার খেতে হবে। বিশ্রাম রাতে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। প্রয়োজনে দিনের বেলা বিশ্রামের সময়সীমা বৃদ্ধি করুন। শারীরিক পরিশ্রম হওয়ার মতো কাজ থেকে বিরত থাকুন। ওষুধ গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় আয়রন, ভিটামিন ইত্যাদি ওষুধগুলো ইফতার বা সাহরির সময় খাবেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকলে রোজা রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের ওষুধের ধরণ ও মাত্রার সমন্বয় করতে হবে। ইনসুলিন নেওয়ার সময় বা মাত্রার পরিবর্তনের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রক্তে শর্করা কমে বা বেড়ে গেলে গর্ভবতী নারী এবং গর্ভস্থ শিশু উভয়ের জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে। গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে। তবে প্রধান বিবেচ্য হলো, গর্ভবতী নারীর সুস্থতা নিশ্চিত করা। কারণ সুস্থ শিশুর জন্য প্রয়োজন সুস্থ মা। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |