শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি সোনিয়াকে
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি সোনিয়াকে ২০১৬ সালের ঘটনা। স্থানীয় রাজুরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি ছাত্রী সোনিয়া। ছোট বোন জান্নাতুল নাঈমাও একই স্কুলের ছাত্রী। যখন ছোট বোনের শারীরিক গঠন বাড়তে থাকে, তখনই তার শারীরিক অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে। এরপরই শুরু হয় তার জীবনের প্রতিকুলতা। শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটে তাকে পড়তে হতো কটু কথার বেড়াজালে। অনেকে তাকে উপহাস করে কথা বলতো। সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও তাকে মোকাবিলা করতে হয়। রাস্তাঘাটে হয়রানির বিরুদ্ধে তার লড়াই ছিল ব্যতিক্রমী। সে মানুষের কোনো উপহাস বা টিপ্পনি কখনোই কানে তোলেনি। এভাবে বাড়ির পাশের প্রাথমিকের গণ্ডি শেষ করে ভর্তি হন মাধ্যমিক স্কুলে। কিন্তু সেখানেও তাকে পড়তে হয় নানান প্রতিবন্ধকতায়। ২০২২ সালে স্থানীয় মিয়ার হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩.৫৬ পেয়ে এসএসসি পাস করেন সোনিয়া। এরপর কলেজে ভর্তি হতে বাধা হয়ে দাঁড়ান মা রহিমা খাতুন। হতাশা নেমে আসে সোনিয়ার জীবনে। কিন্তু দমে যাননি। মেয়ের কান্নাকাটি ও প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মানেন মা। দিনমজুর বাবার একান্ত সহযোগিতায় কলেজে ভর্তি হন সোনিয়া। এখন প্রতিদিন বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কলেজে গিয়ে ক্লাস করেন সোনিয়া। স্বপ্ন দেখেন প্রতিবন্ধকতাকে ছিন্ন করে একজন ব্যাংকার হওয়ার। কিন্তু দিনমজুর বাবা পরপর দু’বার হার্ট অ্যাটাক করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সোনিয়ার উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। মা রহিমা খাতুন বলেন, আমার বড় কোনো ছেলে নেই। আমার মেয়ে যেন তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য সরকার ও বিত্তবান মানুষের সহযোগিতায় চাই। আমার মেয়ে যেন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। বাবা নুরুল হক বলেন, আমার প্রতিটা সন্তান লেখাপড়া করছে। সোনিয়া সবার বড়। তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কখনো পড়ালেখায় পিছু হঠেনি। বর্তমানে আমি অসুস্থ। সন্তানদের পড়ালেখার বিষয়ে আমি চিন্তিত। মামা জাকির হোসাইন বলেন, সোনিয়া আমার বড় বোনের মেয়ে। সে ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছে। বর্তমানে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে তার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তারপরও সোনিয়া আশাবাদী। সোনিয়া বলেন, আমার বাবা একজন দিনমজুর। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা নেই। বাবা পররপর দু’বার হার্ট স্ট্রোক করে এখন অসুস্থ। এ কারণে পরিবারে অভাব অনটন আরও জেঁকে বসেছে। এতে আমার পড়ালেখার খরচ বহন করা পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে একজন ব্যাংকার হওয়া। আমি চাই সরকার ও সমাজের বিত্তবান মানুষ আমার পাশে দাঁড়াক। আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা করুক। কবিরহাট সরকারি কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন, সোনিয়া আমাদের একজন নিয়মিত ছাত্রী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও অর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও সে পড়াশোনা করে আসছে। সব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটা অনুকরণীয়। কবিরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি সোনিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানি। শিক্ষা ক্ষেত্রে সোনিয়ার যে উদ্যম, মনোবল আছে তা ধরে রাখতে কলেজের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। তার উচ্চ শিক্ষার সুবিধার জন্য যদি সম্ভব হয় আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও সাহায্য করার চেষ্টা করব। একইসঙ্গে আমি আহ্বান জানাই সমাজের হৃদয়বান, বিত্তবান মানুষ যেন তার পাশে দাঁড়ায়।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |