তেঁতুলিয়ায় ফুটেছে টিউলিপ, শুরু হল বসন্ত ও ভালবাসার উৎসব!!
মুুস্তাক আহমেদ,পঞ্চগড়
|
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আবারও ফুটেছে টিউলিপ! এবারের বসন্তময় ভালবাসা দিবসকে ঘিড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবের বাহারী রঙ। ইতিমধ্যে টিউলিপের মুগ্ধতা ছড়াতে শুরু করেছে। গতবারের মতো এবারও তেঁতুলিয়া টিউলিপের একখন্ড নেদারল্যান্ড হয়ে উঠেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’র উদ্যোগে ১৬ জন নারী কৃষাণী নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এক একর জমিতে চাষ করা হয়েছে এই ভিনদেশী ফুল। শুক্রবার বিকেলে পর্যটকদের উন্মুক্ত করতে ফিতা কেটে টিউলিপ গার্ডেনের উদ্বোধন করেন ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ও ইএসডিও'র পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার দম্পতি। এ সময় ইএসডিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও টিউলিপ চাষিরা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে থেকে শতশত দর্শনার্থী ও পর্যটকের সমাগমে টিউলিপ বাগান দেখতে ব্যাপক সমাগম ঘটে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি সালের জানুয়ারী মাসের ১০ তারিখে জেলার সীমান্তঘেষা গ্রাম দর্জিপাড়ায় রোপন করা হয় টিউলিপের কুন্দল । মাত্র ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে কয়েক সারিতে ফুল ছড়িয়ে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে টিউলিপ। এবার ১৯ প্রজাতির টিউলিপের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), ষ্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)। তৃতীয়বারের মতো দর্জিপাড়ায় ১৬ জন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এ বছর ২৫ হাজার (বীজ) দিয়ে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। পর্যটকদের মুগ্ধ করতেই এখানে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলছে। এবার দেড়িতে টিউলিপ লাগানো হলেও এটি আগামী আরও দুই-তিন মাস স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি ফেব্রুয়ারি ও আগামী মার্চ মাস জুড়ে এখানকার আচার-অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস ও ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রাঙাবে আমাদের টিউলিপ। মুগ্ধ করবে যেকোন পর্যটকদের। নারী কৃষাণীরা জানান, আমরা তৃতীয়বারের মতো নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ চাষ করেছি। টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটতে শুরু করেছে। যদিও এ বছর সবগুলো গাছে এখনো ফুল আসেনি, ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আশা করছি গত দুই বছরের মতো এবারও টিউলিপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে। পর্যটকরা বলেন , আমরা টিউলিপ দেখতে ছুটে এসেছি এখানে। অসাধারণ ও সুশোভিত ফুল টিউলিপ। সত্যিই খুব মুগ্ধ হয়েছি। এমন সৌন্দর্যের মুগ্ধতার কথা জানান বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরাও। টিউলিপ ফুল দেখতে এসে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক ও তার সহধর্মিনী প্রিয়াংকা অধিকারী বলেন, টিউলিপের সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছি। আসলে এর সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা পাচ্ছি না। এতো ভালো লেগেছে। আসলে আমি যখনই শুনেছি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টিউলিপের চাষ হচ্ছে, তখন থেকেই মাথায় আসে এ টিউলিপ আমাকে দেখতে হবে। পর্যটকরা এলে তাদেরকেও মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিবে ভিনদেশি এই নজরকাড়া টিউলিপ। ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে টিউলিপ চাষে তৃতীয় বর্ষ চলছে। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। এবারের প্রেক্ষাপটি একটু ভিন্ন ছিল দুটো কারণে। একটি হচ্ছে যে, টিউলিপের বাল্ব সংগ্রহের বিষয়টি একটু কঠিন ছিল ডলারের সংকটের কারণে। নেদারল্যান্ড থেকে বাল্ব এলসি করে অনেকটাই চ্যালেঞ্জ ছিল। এ কারণে বিলম্বে এসেছে। ভালো দিক আছে যে, এবারের ফুলগুলো কিন্তু অনেক দিন থাকবে। গতবার এটি একবারই করতে হয়েছিল, যেটি ২১-২৪ দিনের মধ্যে ফুল ফুটে যেত। কিন্তু এবার আশা করছি আগামী দুই মাস এ টিউলিপের রাজসিক সৌন্দর্য ও সৌরভ ছড়াবে সারাদেশে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমরা নেদারল্যান্ড থেকে এক্সপার্ট নিয়ে এসেছিলাম। এখন আমাদের চাষিরা অনেক অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে। তারা বুঝতে পেরেছে কোন পরিবেশে এই ফুল ফোটতে হয়। এ টিউলিপ ঘিরে আগামী মৌসুমে আমরা সারা বছরই ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যের ফুল, ফল চাষ করবো। যাতে সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। এ টিউলিপ চাষে ব্যাপক পর্যটকের আগমনে আমাদেরকে বিস্মিত করে। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |