আমি ফকিন্নির ঘরের সন্তান না, ২০০০ বিঘা জমির মালিক - নিক্সন চৌধুরী
মোহাম্মদ আফজাল ফরিদপুর
|
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন- তিনি (নিক্সন) ভাঙ্গায় ১১০০ বিঘা জমি দখল করেছে। এই অভিযোগের জবাবে নিক্সন বলেছেন, আমি আপনার মতো ফকিন্নির ঘরের সন্তান না। ১১০০ না ২ হাজার বিঘা জমির মালিক আমি। বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদে প্রবেশের মোড়ে নিক্সনের পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের যোগদান উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নিক্সন বলেন, এটাকে যোগদান বলে না। এটাকে বলে ব্যর্থ রাজার ব্যর্থ নীতি। যিনি (কাজী জাফরউল্যাহ) ভাঙ্গার মতো জায়গায় আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পেয়েও সকল কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। এই ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নৌকা অধ্যুষিত এলাকা। আজকে নির্বাচনের ৪৫ দিন বাকি। কিন্তু এই ব্যর্থ নেতার সাথে ৪৫ জন নেতাও নেই। আজকে যাদেরকে মঞ্চে নিয়ে উনি বক্তব্য দেন, যাদের বাসায় বাসায় উঠান বৈঠক করেন, তারা সবাই বিখ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ী। এদের নিয়ে ঘুরার কারণ হইলো কাকা পকেট থেকে টাকা বাহির করবে না। তিনি বলেন, (কাজী জাফরউল্যাহ) আপনি দেখেন, আপনার আশেপাশে কেউ নাই। কেউ থাকবেও না। কারণ একজন রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী যে পাকিস্তানি আর্মিদের খাদ্য সাপ্লাই দিছে তার কাছে আওয়ামী লীগ কোনো দিন সুরক্ষিত থাকতে পারে না। দুই দুইবার লালকার্ড পাইছেন। তার থেকেও লজ্জিত হইছেন ১০ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়। ওই জনসভায় তিন উপজেলা থেকে ৩০০ লোক আনতে পারেন নাই। আর যে ৩০০ লোক আনছেন তারা লজ্জিত হয়ে কাপড় খুলে, গেঞ্জি খুলে বগলে দিয়ে পালিয়ে গেছে। এরপরেই আপনার বোঝা উচিত ছিল এভাবে সময় যতই যাবে ততই আপনার পাল্লা হালকা হতে হতে আপনি একাই থাকবেন। সেদিন ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৮ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে জীবন বাজি রেখে হলুদ পাখিরা "নিক্সনের সমর্থকরা" প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে দিয়েছেন ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসনের জনগণের সন্তান নিক্সন চৌধুরী। এজন্য কাজী জাফরউল্যাহ সাহেব টালমাটাল হয়ে গেছেন। দাবা খেলার উদাহরণ দিয়ে নিক্সন বলেন, রাজা সবকিছু হারিয়ে এক সময় উলঙ্গ হয়ে যায়। এরপর ১৬ চালে তাকে বাঁধ দিতে হয়। আমাদের ১৬ চাল শুরু হয়ে গেছে কাকা। যে কোনো এক চিপায় নিয়ে মাত করে দেব আপনাকে। নিক্সনের প্রতি কাজী জাফরউল্যাহ বিভিন্ন সময় ১১০০ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ আনেন। এই অভিযোগ সম্পর্কে নিক্সন বলেন, চাচা অনুরোধ করবো দয়া করে সত্য কথা বলবেন। ১১০০ না ২ হাজার বিঘা জমির মালিক আমি। কারণ আমি আপনার মতো ফকিন্নির ঘরে জন্মাই নাই। আমার দাদা বাদশা খালাসি ছিল। এই ভাঙ্গা কোর্ট আমাদের জমিতে দেওয়া। আমরা আপনার মতো খাদ্য কর্মকর্তার সন্তান হইয়া, পাকিস্তানি আর্মিদের খাদ্য সাপ্লাই দিয়া, সার কারখানার টাকা চুরি কইরা পানামার ব্যাংকে পাচার করি নাই। আমরা আপনার মতো দুর্নীতিবাজ না। বাড়িতে চিড়িয়াখানা থাকার কথা স্বীকার করে নিক্সন বলেন, আমার বাড়িতে পশু-পাখি দেখতে মানুষ বউ-বাচ্চা নিয়ে শুক্রবারে ঘুরতে যায়। নিক্সন অভিযোগ করেন, কাজী জাফর উল্যাহ আওয়ামী লীগ বানান আঙ্গুল দিয়া। তুমি আইছো, তুমি সাংগঠনিক। এভাবে তিনি আওয়ামী লীগটাকে ধ্বংস করেছেন। আসল আওয়ামী লীগ দেখে যান। সব এই মঞ্চে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে আপনার তলা খুলে গেছে। আগামী নির্বাচনে এই তিন থানায় আমার গণজোয়ার বইছে। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার নৌকা এবার প্রধানমন্ত্রী আমাকেই দেবে। এই নৌকা পেলে আমি দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব। এ সময় তার সমর্থকরা ‘পারবেন, পারবেন’ বলে সমর্থন দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান। বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, নিক্সনের পক্ষে যোগদান কারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক চোকদার মো. শামীম প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্যাহকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুইবার ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাদারীপুররের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এরপর থেকে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে নিক্সনকে ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর ভাঙ্গার আজিম নগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে একটি বাগান বাড়ি করেছেন নিক্সন।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |