ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ৫ অক্টোবর ২০২৪ ২০ আশ্বিন ১৪৩১
টানা তিন মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ কেনো আন্তর্জাতিক চাপে?
সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী
প্রকাশ: Sunday, 12 November, 2023, 2:04 AM
সর্বশেষ আপডেট: Monday, 13 November, 2023, 1:42 AM

টানা তিন মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ কেনো আন্তর্জাতিক চাপে?

টানা তিন মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ কেনো আন্তর্জাতিক চাপে?

২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ভূমিধ্বস সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রচণ্ড সংকটের মুখোমুখি। দেশের বিদ্যুৎ খাত বিপর্যস্ত। দেশজুড়ে জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাসের ক্রমাগত হুমকি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভারত, শ্রীলংকা এমনকি পাকিস্তানের চাইতেও পিছিয়ে। বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় তলানিতে। এসব চ্যালেঞ্জের মাঝে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন আন্তরজাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই কটাক্ষ করে কিংবা শঙ্কিতভাবে বলছেন - বাংলাদেশ দেউলিয়াত্বের পথে। এমন এক রূঢ় বাস্তবতার মাঝেই নিজের প্রজ্ঞা, নানামুখী পদক্ষেপ আর সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর টাকা তিন মেয়াদের পনেরো বছরের মাত্র দশ বছরের মাথায় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঈর্ষণীয় এক পর্যায়ে উন্নীত করেন যার ফলে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ বিবেচিত হতে থাকে অর্থনৈতিক সুপার স্টার কিংবা এশিয়ার বিস্ময়কর অর্থনীতিক সমৃদ্ধির রোল মডেল হিসেবে। এ সময়ে মধ্যে অর্থনীতি সমৃদ্ধির পাশাপাশি অর্জিত হয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও সন্ত্রাস দমনে উল্লেখযোগ্য অর্জন। বিশ্বের বহু দেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সবগুলো দেশের কাছেই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি নিত্য আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতির সাথে পাল্লা দিতে না পেরে পাকিস্তানের অর্থনীতি যখন দেউলিয়াত্বের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে, তখন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চরম বিরোধিতাকারী পাকিস্তানী রাজনীতিবিদ এমনকি সামরিক বাহিনীর শীর্ষ অফিসাররাও হাপিত্যেশ করতে থাকেন এবং বারবার প্রশ্ন করতে থাকেন - বাংলাদেশ এভাবে এগিয়ে গেলেও পাকিস্তান কেনো পারছেনা। 


এদিকে আওয়ামীলীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের শেষপ্রান্ত, অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং এদের আদর্শিক মিত্র জামাতে ইসলামী ফের ক্ষমতায় আসার জন্যে বেপরোয়া হয়ে উঠলেও ওরা বুঝতে পারে, শেখ হাসিনা যেভাবে শক্তহাতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ভারত বিরোধী আন্তঃসীমান্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী অপতৎপরতা নির্মূল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা বিএনপি-জামাতের পক্ষে অসম্ভব। কারণ, ওদের রাজনীতির মূল চালিকাশক্তিই হচ্ছে ভারত বিরোধিতা এবং ইসলাম ধর্মকে ভোট শিকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের উগ্র উন্মাদনা ছড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসা এবং টিকে থাকা। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় ফিরে আসার লক্ষ্যে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তির সাথে মিলে এক ভয়ঙ্কর ছক আঁকে। এই মিশন সফল করতে অর্থের যোগান দেয় জামাতে ইসলামীর কিছু নেতা, পাকিস্তানী আইএসআই আর বিএনপি নেতা তারেক রহমানের পুরনো মিত্র কুখ্যাত সন্ত্রাসী গডফাদার দাউদ ইব্রাহিম। 


এদিকে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে বিএনপি-জামাত। এর ঠিক আগেই বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এতিমখানার অর্থ তশ্রুপের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অন্তরীণ। এ অবস্থায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন ব্রিটেনে পালিয়ে থাকা দন্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান যাকে ২০০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "ভীতিকর লোক" এবং চরম দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নানা অপকর্মের পাশাপাশি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে মিলে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে রয়েছে। পাশাপাশি তাঁর দলের বেশকিছু নেতার বিরুদ্ধে আল কায়েদা, ইসলামিক ষ্টেটসহ আরো কিছু জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ রাখার এবং বাংলাদেশকে উগ্র ইসলামপন্থী নব্য-তালিবান রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এখানে উল্লেখ্য, তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস-কে নিজেদের আদর্শিক মিত্র এমনকি রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এবিষয়ে ওয়েব জগতে অসংখ্য প্রামাণিক দলিল আছে।


আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত তিন বছর যাবত বিএনপি ও এদের আদর্শিক মিত্র জামাতে ইসলামী কোটিকোটি ডলার খরচ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে ক্ষমতাসীন আওযামীলীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে ব্যাপক লবিষ্ট তৎপরতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অপপ্রচারের পাশাপাশি হোয়াইট হাউস এবং জাতিসংঘে নিজেদের দলীয় কর্মীকে ভুঁয়া সাংবাদিকের পরিচয়ে মিডিয়া পুল অন্তর্ভুক্ত করে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত পন্থায় কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপির কর্মী মুশফিকুল ফজল আনসারী যখন হোয়াইট হাউস এবং জাতিসংঘে রীতিমত দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিংবা বাংলাদেশের অন্য কোনো গণমাধ্যম গত তিন বছরে তাদের একজন প্রতিনিধিকেও হোয়াইট হাউস কিংবা জাতিসংঘে কেনো প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাতে পারলো না এটা আমার বোধগম্য নয়। তাহলে কি আওয়ামীলীগ সরকার নিজেদের ওভার কনফিডেন্স কিংবা বিচক্ষণতার অভাবেই এমনটা করলো? নাকি আওয়ামীলীগপন্থী গণমাধ্যমগুলোর মালিকরা এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়টা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন? এমনটা হয়ে থাকলে তো প্রশ্ন করাই যায়, তারা কি তাহলে ইচ্ছে করেই বিএনপির লোক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে একচেটিয়া সুযোগ করে দিলেন?


গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে বহু সাংবাদিক বিভিন্ন দেশে গেছেন। ওনাদের অনেকেই ঢাকা শহরে প্লটসহ নানা সুযোগসুবিধা নিয়েছেন। অথচ তাঁদের একজনও এই দীর্ঘ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা তাঁর সরকারের অর্জন ও প্রশংসনীয় উদ্যোগগুলো তুলে ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একটা নিবন্ধও প্রকাশ করতে পারলেন না। এর কারণ কি ওনাদের সীমাবদ্ধতা নাকি অক্ষমতা? এই দুই কারণের যেটাই হোক, এক্ষেত্রে তো প্রশ্ন করাই যায়, এসব অক্ষম কিংবা অযোগ্য লোকদের তাহলে এতোকাল কেনো অহেতুক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলো?


আজ বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ যে কারণে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এর মূলে গত তিন বছর যাবত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে চলমান একের-পর-এক অপপ্রচার। দ্যা ইকোনমিস্ট থেকে শুরু করে নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ভয়ঙ্কর অপপ্রচার। খুব অবাক হয়ে দেখছি সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিত্ব এবং আওয়ামীলীগপন্থী গণমাধ্যম, এমনকি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনের প্রশংসায় ব্যস্ত। ওনারা কি এটা পড়ে দেখেন নি? ওই প্রতিবেদনে আওয়ামীলীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বহু মিথ্যে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। এমনটাও বলা হয়েছে ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর নাকি শেখ হাসিনার পুরোদস্তুর একনায়ক হিসেবে অভিষেক হবে। এটা কি আওয়ামীলীগের নেতারা পড়েননি? না পড়েই কেনো তারা টাইম ম্যাগাজিনের অপপ্রচারকে মূর্খের মতো বাহবা দিয়ে এটাকে আরো ছড়াচ্ছেন?


অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউরোপে সরকারের পক্ষে ইতিবাচক রিপোর্ট ও নিবন্ধ প্রচারে ইইউ রিপোর্টার নামের এক অজ্ঞাত-অখ্যাত ওয়েব সাইট বেছে নিয়েছে যে ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে অপরাধী এমনকি প্রতারকদের পক্ষেও প্রচারণা চালানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কি এটুকুও যোগ্যতা যে ইইউ রিপোর্টার-এর মতো অজ্ঞাত ওয়েবসাইটেই শুধু বাংলাদেশের পক্ষে ইতিবাচক কিছু প্রকাশ করানো গেলো? পশ্চিমা বিশ্বের খ্যাতিমান পত্রিকা এবং সাময়িকীগুলোয় কি এটা করা সম্ভব নয়?


আসন্ন নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এই সময়ে আওয়ামীলীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অপপ্রচারের মাত্রা ব্যাপকহারে বাড়বে। পাশাপাশি বাড়বে আন্তর্জাতিক চাপ। এসব মোকাবেলায় এক্ষুনি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এটা না করতে পারলে বাংলাদেশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দেশ চলে যাবে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কব্জায়। আবার ক্ষমতায় আসবে বিএনপি।  বাংলাদেশ পরিণত হবে নব্য তালিবান রাষ্ট্রে।



সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী  আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, কাউন্টার টেরোরিজম বিশেষজ্ঞ ও ইংরেজী পত্রিকা ব্লিটজ এর সম্পাদক।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status