পাথরঘাটার উপকূলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র
ইব্রাহীম খলীল, পাথরঘাটা
|
![]() পাথরঘাটার উপকূলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র এ অন্যতম দর্শনীয় স্থানটিতে যেমন উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য। অন্যদিকে অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ। গড়ে ওঠা সবুজ নিসর্গ আর হরেক রকম বণ্যপ্রাণি। দল বেঁধে ছুটে চলেছে হরিণের দল। বানর আর বুঁনো শুকরের অবাধ বিচরণ, পাখির কলরব আর সবুজ পাতার সানাইয়ে সারাক্ষণ মুখর থাকে হরিনঘাটা। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত হরিণঘাটার বনে হরিন, বানর, শুকর, কাঠবিড়ালি, মেছো বাঘ, ডোরা বাঘ, সজারু, উদ বিড়াল, শিয়ালসহ অসংখ্য বুনো প্রাণিরর বিচরণ। নানা প্রজাতির পাখির কলরবে সারাক্ষণ মুখর থাকে হরিণঘাটা। এ সৈকতে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম বলে এখানে নানা প্রজাতির পাখির নির্বিঘ্ন বিচরন করতে চোখে পড়ে। এ ছাড়া সৈকতে ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দলও প্রায়শই তৈরি করে দেখার মতো এক দৃশ্য। মূলত সুন্দরবনের চেয়ে আকৃতিতে বড় প্রজাতির মায়াবি চিত্রা হরিণের বিচরণস্থল হওয়ায় এই বনের নামকরণ হয়েছে হরিণঘাটা। পাথরঘাটা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭ সাল থেকে বনবিভাগের সম্প্রসারণে নানা প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে হরিণঘাটা বনসৃজন শুরু হয়। পরে সাগর তীর ও মোহনায় দুটি চর জেগে নতুন বন সৃষ্টি হয়েছে। এ চর দুটিকে লালদিয়া বন ও বিহঙ্গ দ্বীপ নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার একরজুড়ে দৃষ্টিনন্দন এ বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, গেওয়াসহ সৃজিত সুন্দরী ও ঝাউবন রয়েছে। এ বনাঞ্চলের পরিধি ক্রমশ বেড়েই চলছে। ২০১৫ সালে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলকে ইকো ট্যুরিজম হিসেবে গড়ে তুলতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জলবায়ু ট্রাস্টের তহবিলের আওতায় বন ও সাগরের বিশাল জলরাশি দর্শনের লক্ষ্যে দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য (বনের ভেতর পায়ে চলার সেতু পথ) ফুট ট্রেইল নির্মাণ করা হয়। ফুট ট্রেইল দিয়ে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বনের ভেতরের প্রকৃতি ও সাগরের হাতছানি দর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এ ছাড়াও বনের ভেতর বিশ্রামাগার ও গোলঘরসহ ৬০ মিটার উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ঘন বন আর সবুজে সবুজে ছাওয়া হরিণঘাটার বনের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করেছে লালদিয়া, পদ্মা, লাঠিমারা নামের সুবিশাল তিনটি সৈকত। সুর্যাস্ত-সুর্যোদয়ের দৃশ্য অবলোকনের জন্য এর চেয়ে উপযোগী স্থান আর বুঝি নেই। তাই দেশে বেড়ানোর চমৎকার একটি স্থান হতে পারে হরিণঘাটা। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৭ কিঃ মিঃ দক্ষিণে অবস্থিত হরিণঘাটা বন হতে পারে দেশের অন্যতম একটি সৌন্দর্য্য ও সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকুনুজ্জামান খান বলেন, পাথরঘটা উপজেলায় হরিণঘাটা, লালদিয়া ও বিহঙ্গ দ্বীপ বনাঞ্চলের ইকো-টুরিজম ক্রমে ক্রমে বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। দেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের মতো আকর্ষণীয় করতে ডাকবাংলো, ওয়াস ব্লক, পিকনিক কর্ণার, গেট, পার্কিং স্ট্যান্ড, ফুট ট্রেইল, রাস্তা, ব্রিজ, বিশ্রামাগার ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ইকো-ট্যুরিজম দর্শনার্থীদের আরও মুগ্ধ করবে এমন যা যা দরকার আমরা পরিকল্পনা করছি। যেভাবে পৌছানো যাবে: ঢাকা থেকে সরাসরি পাথরঘাটার বাস রয়েছে, তেমনি আবার চিটাগং থেকেও পৌছানো যায়। যে পথেই যান না কেন খরচ হবে মাত্র হাজার টাকার মধ্যে। বাসে উঠতে পারবেন আব্দুল্লাহপুর, মিরপুর, গাজীপুর, গাবতলী, সায়েদাবাদ থেকে। পরে পাথরঘাটায় পৌছে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল অথবা পিকঅ্যাপ ভ্যান, মাহিন্দ্রা ও টেম্পুতে করে সরাসরি চলে আসা যায় সৌন্দর্য্যমন্ডিত কাঙ্ক্ষিত হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রে।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |