শরীরের অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ভিডিও ছড়িয়ে দিতো গ্রুপটি
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() শরীরের অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ভিডিও ছড়িয়ে দিতো গ্রুপটি তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য কর্তৃক ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এসব সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে। সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় সন্ত্রাসী রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরমান নামক এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে। এই ঘটনায় ২৭শে আগস্ট ভুক্তভোগী বাদী হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদ থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা (নং-১৫২) করেন। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। তাদের গ্রুপে ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। ওই সন্ত্রাসী গ্যাংটি রাফাত, তুষার ও আনোয়ারের নেতৃত্বে বিগত ৪-৫ বছর যাবৎ পরিচালিত হচ্ছে। আসামিরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যেত। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ¦বর্তী এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তারা ওই এলাকাসমূহে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। এ ছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ বর্ণিত এলাকাসমূহে মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত। এ ছাড়াও আসামিরা বর্ণিত কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দেয়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আসামি তুষার ভুক্তভোগী আরমানের বাম হাতে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে কব্জি বিচ্ছিন্ন করে এবং রাফাত ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে আরমানের ডান হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে। ইতিপূর্বেও তারা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভুক্তভোগীকে একই কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করেছে। পরে এসব নৃশংসতার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতো। খন্দকার আল মঈন বলেন, মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাতের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় বিগত ৪-৫ বছর যাবৎ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করতো। সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করতো ও এই গ্রুপের প্রধান হিটম্যান হিসেবে কাজ করতো। এই গ্রুপের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে সে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাঁধ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। সেই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে সে প্রথমে ফরিদপুরের একটি মাজারে গিয়ে আত্মগোপন করে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করার পর পুনরায় গ্রেপ্তারের আশংকায় ওই স্থান থেকে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে বাগেরহাটে যায়। পরবর্তীতে বাগেরহাট থেকে অন্যত্র আত্মগোপনে যাওয়ার সময় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার তুষার হাওলাদার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সে রাফাতের নির্দেশনা অনুযায়ী ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা করতো। পরে গ্রুপের অন্য সদস্যসহ তারা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতো বলে জানা যায়। এই ঘটনার পর সে রাফাতের সঙ্গে আত্মগোপন করে এবং পরবর্তীতে বাগেরহাট থেকে র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার আহমেদ খান ওই সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের উপযুক্ত টার্গেট নির্বাচন করতো। কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার সময় গ্রেপ্তারকৃত রাফাত ও তুষার উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীকে হামলা করে। ঘটনার পরপর গ্রেপ্তার রাফাত ও তুষার আত্মগোপনে গেলেও সে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। পরে শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় তার নেতৃত্বে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৪ সহযোগীসহ সে গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হাসান ওরফে গুঁটি হাসান, হানিফ হোসেন জয়, রমজান ও রাজু এই সন্ত্রাসী গ্রুপের সহযোগী সদস্য। তারা গ্রেপ্তার রাফাতের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। টার্গেট নির্বাচনের পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভুক্তভোগীকে নৃশংসভাবে হামলা করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর আদাবরসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও মিরপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী বাহিনীরা সরব হচ্ছে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দমনে কি ব্যবস্থা নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৭ সালে র্যাব প্রথম কিশোর গ্যাং কালচার আবিষ্কার করে। আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে জড়িত ১১ শ’ সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। সারা বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং দমনে ও এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যে সব আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তা নেয়া হবে।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |