ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মৃত্যুর অপেক্ষায় ১৯৮২ জন
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Saturday, 11 September, 2021, 11:38 AM

মৃত্যুর অপেক্ষায় ১৯৮২ জন

মৃত্যুর অপেক্ষায় ১৯৮২ জন

রাজধানীর লালবাগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিজয়ী কমিশনারের (কাউন্সিলর) বিজয় মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে ১৯৯৪ সালের ৩১ জানুয়ারি। পরাজিত প্রার্থীর সন্ত্রাসীদের হামলায় ছটফট করতে করতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ছয় যুবক। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও একজন।

রোমহর্ষক এ ঘটনাটি ‘লালবাগের সেভেন মার্ডার’ হিসেবে ব্যাপক আলোচিত। এ ঘটনায় করা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়। নয়জনের যাবজ্জীবন এবং একজনের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের একজন আব্দুস সালাম ওরফে মতি এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

২০০৯ সালের ২৮ মে বিচারিক আদালত তার ফাঁসির আদেশ দেন। এরপর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও তার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি। কারণ মামলাটি এখন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর। ওইদিন সরকারবিরোধী অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। ২৫ বছর বয়সি দর্জি বিশ্বজিৎ দাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।

২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এদের একজন রফিকুল ইসলাম শাকিল ওরফে শাকিল শিকদার। তিনি এখন কারাগারে। কিন্তু আট বছরেও তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি।

কেবল এ দুটি ঘটনাই নয়। সারা দেশের কারাগারগুলোতে ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে আছেন এক হাজার ৯৮২ জন বন্দি। এদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৯২৮ জন এবং নারী ৫৪ জন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ ধরনের বন্দির সংখ্যা ৯১ জন।

এই কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৮৬ জনই বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আসামি। বিচারিক আদালত তাদের ফাঁসির আদেশ দেন ২০১৩ সালের ৫ মে। কিন্তু এখনো এ রায় কার্যকর হয়নি। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেছেন। কারা সূত্র জানায়, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণেই ফাঁসি কার্যকর করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারও ফাঁসির আদেশ হয়ে গেলে তিনি বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই আপিল করেন। আমাদের পক্ষ থেকে দ্রুত রায় কার্যকরে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পেপারবুক তৈরিসহ আনুষঙ্গিক নানা কাজে অনেক সময় চলে যায়। এছাড়া গত দেড় বছরে করোনা পরিস্থিতিতে কখনো আদালত বন্ধ ছিল, আবার কখনো খোলা ছিল। দ্রুত রায় কার্যকরে এটিও একটি বাধা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, তবে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই।

জানা যায়, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তখনকার মুসলিম লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ২০১৩ সালের ১৫ মে গ্রেফতার করা হয়। যুদ্ধাপরাধের ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পরের বছর ২ ফেব্রুয়ারি তার বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু প্রায় সাত বছরেও কার্যকর হয়নি ট্রাইব্যুনালের রায়। মামলাটি এখন আপিল বিভাগে রিভিউ চলমান।

বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ফাঁসির আদেশ হয় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২১ আগস্ট নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। কিন্তু এই দুটি ফাঁসির আদেশের কোনোটিই এখনো কার্যকর হয়নি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুটি মামলার ক্ষেত্রেই সুপ্রিমকোর্টে আপিল চলমান আছে।

জানা যায়, একটি হত্যা মামলায় জেএমবি সদস্য মাসুদুর রহমান মাসুদ ওরফে আহসানের ফাঁসি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট। এরপর পাঁচ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনো তার ফাঁসি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কারা সূত্র জানায়, ৩৮ বছর বয়সি আহসানের বাবার নাম মোফাজ্জল হোসেন। বাড়ি নারায়ণগঞ্জ বন্দরের আলী নগর গ্রামে। তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেছেন। এখন সেটির রিভিউ চলছে।

কারা সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সবচেয়ে কম আছেন ময়মনসিংহ বিভাগে। এই বিভাগের চারটি কারাগারের মধ্যে তিনটি কারাগারে কোনো ফাঁসির আসামি নেই। তবে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন আসামি আছেন। তিনজনই হত্যা মামলার আসামি। তারা হলেন- ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার মহজমপুর পূর্বপাড়ার নূরে আলম, মুক্তাগাছার পাইকা শিমুল গ্রামের রফিকুল ইসলাম এবং ফুলবাড়িয়ার কালাদহ দীঘলপাড়ার মনিরুজ্জামান সেলিম।

এদের মধ্যে ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট সেলিমের, ২০১৯ সালের ১৩ মে রফিকুলের এবং গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি নূরে আলমের ফাঁসির রায় দেন বিচারিক আদালত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবির যুগান্তরকে বলেন, ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট আসামিকে কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়। ফাঁসি কার্যকরের আগ পর্যন্ত তিনি ওই সেলেই থাকেন। কোনো আসামির ফাঁসি কার্যকর করতে হলে সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার কারণেই দীর্ঘ সময় ধরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কনডেম সেলে রাখা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status